ইম্প্রভাইজ এক্সপ্লোসিভডিভাইস
রীতিমতো আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠছে 'আইইডি' (ইম্প্রভাইজ এক্সপ্লোসিভডিভাইস)। দুষ্কৃতকারীরা সাম্প্রতিক সময়ে কেবল ককটেলের মাধ্যমে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও যে কোনো সময়ে তারা আইইডির দিকে ঝুঁকতে পারে। দূরনিয়ন্ত্রিত রিমোট কন্ট্রোল কিংবা মুঠোফোন তরঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে ঘটাতে পারে বড় ধরনের বিস্ফোরণ। সালফার, পটাশিয়াম এবং নানা ধরনের কাঁচামাল সংগ্রহ করে তৈরি করতে পারে গ্রেনেড কিংবা হরেক রকমের বোমা। আবার চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ড এলাকায় জাহাজ কাটার 'ফ্লেয়ার রকেট' দিয়েও দুর্বৃত্তরা বড় ধরনের বিস্ফোরক তৈরি করতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা।
সর্বশেষ গতকাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার সানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল বাড্ডার আফতাবনগর এলাকায় বোমা তৈরির কারিগর আনোয়ার হোসেনের বাসা থেকে দুটি শক্তিশালী তাজা বোমা, জেএমবির লিফলেট, বই ও বোমা তৈরির ম্যানুয়াল, ব্লাস্টিং ক্যাপ, ব্যাটারি, স্কসটেপ, রিমোট কন্ট্রোল ও জাম্পার উদ্ধার করার পর চোখ কপালে উঠেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের। ওই সময় তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা হয় চিকিৎসাধীন আনোয়ারের স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে। প্রসঙ্গত, গত রবিবার কাঁটাবন এলাকায় আনোয়ার নিজের পকেটে বোমা বহনকালে তা বিস্ফোরিত হয়। এতে তার একটি পা সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গার মাংস উড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলের মতো অতীতেও বিভিন্ন সময় বড় ধরনের নাশকতার কাজে আইইডির ব্যবহার হয়েছিল। বিভিন্ন সময় বোমা তৈরির আসল কারিগরদের কয়েকজন গ্রেফতার হলেও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির শূরা সদস্য জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান ছাড়া আর কারও ব্যাপারে খবর নেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কাছে। এদিকে চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ড এলাকায় জাহাজ কাটার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় 'ফ্লেয়ার রকেট'। এসব ফ্লেয়ার রকেটকে কিছু ইম্প্রভাইজ করে নাশকতার কাজে ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা। গত বছর হালিশহর এলাকায় জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে 'ফ্লেয়ার রকেট' ব্যবহার করার পর টনক নড়ে গোয়েন্দাদের। এরপর কিছুদিনের জন্য চট্টগ্রামের কুমিরা ও ভাটিয়ারী এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে তাও বন্ধ হয়ে যায়।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আমদানিকৃত সালফার ও পটাশিয়াম অধিক মুনাফার লোভে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী তুলে দিচ্ছে বোমা তৈরীর কারিগরদের হাতে। আইইডি ঠেকাতে হলে কেমিক্যাল আমদানীকারকদের কঠোর নজরদারীর মধ্যে রাখতে হবে। তারা কি পরিমান বিস্ফোরক আমদানি করলো এবং কোথায় কোথায় তা ব্যবহার করলো এ বিষয়টির পূঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অপরাধ বিশেষজ্ঞ শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন জানান, আইইডি সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন এবং তৈরী করতে পারেন এমন কারিগরদের কঠোর নজরদারীর মধ্যে রাখতে হবে গোয়েন্দাদের। একইসঙ্গে বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরী করা যায় এমন কাঁচামাল বিক্রেতা ও আমদানীকারকদেরও কড়া নজরদারীর মধ্যে রাখতে হবে। নইলে নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঠেকানো সম্ভব নয়। বোমা নিষ্ক্রিয়করন ইউনিটের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইইডি তৈরির প্রধান রাসায়নিক উপাদান হচ্ছে সালফার, পটাশিয়াম, গান পাউডার, ব্ল্যাক পাউডার। এসব রাসায়নিক উপাদান ছাড়াও বিস্ফোরণের তীব্রতা বাড়াতে কাঁচের গুঁড়া, বাইসাইকেলের বিয়ারিং-এর বল ও মার্বেল ব্যবহার করা হয়। বিস্ফোনের ভয়াবহতা বাড়ানোর জন্য কারিগররা ক্ষেত্র বিশেষে জিআই পাইপ, মোটা কাঁচের বোতল, ব্যবহার করে থাকে। হাতে তৈরী এসব শক্তিশালী বোমা কিংবা ককটেলগুলোকে আইইডি প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এগুলো রিমোট কন্ট্রোল কিংবা মুঠোফোন তরঙ্গ ব্যবহার করে বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঘটানো সম্ভব।
ঘটনা-১: গত ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মুফতি ইজহারের জমিয়তুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ ও ১৮ বোতল পিপরিক এসিড, ৩ টি শক্তিশালী হ্যান্ড গ্রেনেড ও ৫০ টি গ্রেনেডের খোসা উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনা-২: গত বছরের ১৭ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে এক স্টাফের উপর মুঠোফোন নিয়ন্ত্রিত বোমা বিস্ফোরণ ঘটনো হয়েছিলো। ওই বোমা তৈরীর কারিগর ছিলেন ভাষানটেকের মাটিকাটা এলাকার মোটরগাড়ীর ইলেকট্রিক মেকানিক এসএম আবু হোসেইন সারোয়ার। মুঠোফোনের মাধ্যমে বিস্ফোরণ সম্ভব এমন ডিভাইস তৈরী করার পারদর্শীতা দেখে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছিলেন ডিবি কর্মকর্তারা।
পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবী করেছেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), শিল্প মন্ত্রণালয়, কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এসব তৈরির কাঁচামালের উৎসের সন্ধানে কাজ শুরু করেছে। দেশে বিস্ফোরক তৈরির মূল উপাদান সালফার ও পটাশিয়াম নাইট্রেটের অন্যতম আমদানিকারক ম্যাচ ফ্যাক্টরি, আতশবাজি তৈরির কারখানা, সার ও কীটনাশক প্রস্তুতকারী শিল্পকারখানা, এগ্রোভেট প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। বোমা তৈরির বিভিন্ন উপাদানের বৈধ ও অবৈধ আমদানিকারকদের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫-২০টি অবৈধ আমদানিকারককে চিহ্নিত করতে পেরেছেন তারা। অবৈধ আমদানিকারকদের অধিকাংশই পুরান ঢাকার।
ঘটনা-১: গত ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মুফতি ইজহারের জমিয়তুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ ও ১৮ বোতল পিপরিক এসিড, ৩ টি শক্তিশালী হ্যান্ড গ্রেনেড ও ৫০ টি গ্রেনেডের খোসা উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনা-২: গত বছরের ১৭ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে এক স্টাফের উপর মুঠোফোন নিয়ন্ত্রিত বোমা বিস্ফোরণ ঘটনো হয়েছিলো। ওই বোমা তৈরীর কারিগর ছিলেন ভাষানটেকের মাটিকাটা এলাকার মোটরগাড়ীর ইলেকট্রিক মেকানিক এসএম আবু হোসেইন সারোয়ার। মুঠোফোনের মাধ্যমে বিস্ফোরণ সম্ভব এমন ডিভাইস তৈরী করার পারদর্শীতা দেখে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছিলেন ডিবি কর্মকর্তারা।
পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবী করেছেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), শিল্প মন্ত্রণালয়, কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এসব তৈরির কাঁচামালের উৎসের সন্ধানে কাজ শুরু করেছে। দেশে বিস্ফোরক তৈরির মূল উপাদান সালফার ও পটাশিয়াম নাইট্রেটের অন্যতম আমদানিকারক ম্যাচ ফ্যাক্টরি, আতশবাজি তৈরির কারখানা, সার ও কীটনাশক প্রস্তুতকারী শিল্পকারখানা, এগ্রোভেট প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। বোমা তৈরির বিভিন্ন উপাদানের বৈধ ও অবৈধ আমদানিকারকদের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫-২০টি অবৈধ আমদানিকারককে চিহ্নিত করতে পেরেছেন তারা। অবৈধ আমদানিকারকদের অধিকাংশই পুরান ঢাকার।
ডিবি'র বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের প্রধান এডিসি সানোয়ার হোসেন জানান, দেশে তৃণমূল পর্যায়ের কিছু প্রতিষ্ঠান অননুমোদিতভাবে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সালফার, পটাশের মতো রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করছে। সমপ্রতি দেশে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এসব বিস্ফোরকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এসব কাঁচামাল সংগ্রহ করছে বোমা ব্যবসায়ী, কারিগর ও রাজনৈতিক কর্মীরা। বিস্ফোরক দ্রব্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে রাজধানীতে রাসায়নিক ও বিস্ফোরক দ্রব্যের বিক্রেতা ও আমদানিকারক রয়েছেন ৯৯৪ জন। তবে দেশে বৈধ লাইসেন্সধারীর চেয়ে বিস্ফোরক দ্রব্যের লাইসেন্সবিহীন বিক্রেতা ও আমদানিকারকের সংখ্যাই বেশি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে 'ম্যানেজ' করে অনেক মালিকই গুদামে লাইসেন্সবিহীনভাবে বিস্ফোরক ও কেমিক্যাল মজুদ করে ব্যবসা করছেন। আইইডি নিয়ে র্যাব কাজ করছে জানিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, যেসব এলাকায় বোমা তৈরীর কাঁচামাল পাওয়া যায় সেখানেও নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে উৎকণ্ঠার কারন নেই। বোমা তৈরীর কারিগরদেরও গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত আছে।
No comments
Post a Comment
Thanks For Comment